ফ্লোরিডার সিলভার স্প্রিংস বাংলাদেশীদের নতুন ভ্রমণগন্তব্য

সিলভার স্প্রিংস পার্কের প্রবেশদ্বারে লেখিকা ও তার পরিবার-ছবি: লেখকের সৌজন্যে

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা মানেই থিম পার্ক আর ব্যস্ত পর্যটন কেন্দ্র। তবে এ রাজ্যের বুকেই আছে এক নিভৃত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জায়গা, সিলভার স্প্রিংস।

গেইন্সভিলের কাছাকাছি ওকালা শহরে অবস্থিত এই স্থানটি তার স্বচ্ছ জলধারা ও বিখ্যাত গ্লাস-বটম বোট (নিচ থেকে স্বচ্ছ নৌকা) ভ্রমণের জন্য পরিচিত। সিলভার স্প্রিংসের মনোরম পরিবেশ শুধু ভ্রমণপ্রেমীদের নয়, বরং আমেরিকায় বসবাসরত বহু বাংলাদেশী পরিবারের কাছেও হয়ে উঠেছে এক প্রিয় আশ্রয়স্থল।

সম্প্রতি আমি, আমার স্বামী, আমাদের ২০ মাস বয়সী কন্যা এবং কয়েকজন বন্ধু মিলে সিলভার স্প্রিংস ঘুরে এসেছি। এক কথায়—চমৎকার এক দিন কেটেছে। বড় একটি গাছের ছায়ায় শুয়ে পাখির কিচিরমিচির শুনতে শুনতে একটু ঘুমিয়েও নিয়েছিলাম!

বিকেলে আইসক্রিম ও পপকর্ন খেয়েছি, আর সঙ্গে ছিল ঘরে বানানো গরম খিচুড়ি। সবাই মিলে প্রকৃতির কোলে বসে খাওয়া ওই সাদামাটা খাবার যেন হৃদয়ে গেঁথে থাকার মতো এক স্মৃতি হয়ে রইল।

সিলভার স্প্রিংস ট্যুরের এক দৃশ্য- ছবি: লেখকের সৌজন্যে

বাংলাদেশী পর্যটকদের কেন প্রিয় এই স্থান?
সিলভার স্প্রিংসকে অনেক বাংলাদেশী প্রবাসীই বলেন—”আমার দেশের মতো”। এখানকার খোলা প্রকৃতি, স্বচ্ছ নদী আর ছায়াঘেরা গাছগাছালি অনেকটাই বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবেশের কথা মনে করিয়ে দেয়। যারা ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে বা থিম পার্কের কোলাহলে ক্লান্ত—তাদের জন্য এটি এক নিরিবিলি পালাবদল।

এছাড়া এটি পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য আদর্শ। শিশুদের দৌড়াদৌড়ি করার জন্য খোলামেলা নিরাপদ পরিবেশ আছে, বড়দের জন্য আছে প্রশান্তি।

কি কি দেখবেন ও করবেন?
সবচেয়ে জনপ্রিয় আকর্ষণ হলো গ্লাস-বটম বোট ট্যুর। নৌকার নিচের কাচ দিয়ে আপনি দেখতে পারবেন ঝকঝকে পানির নিচে থাকা মাছ, উদ্ভিদ, এমনকি পুরোনো সিনেমার সেটের কিছু নিদর্শন—যেমন পুরাতন টারজান ছবির শুটিং এখানেই হয়েছিল।

অন্য আকর্ষণগুলোও বেশ উপভোগ্য:
>কায়াকিং বা ক্যানু ভ্রমণ
>বড় বড় গাছের নিচ দিয়ে হাঁটার ট্রেইল
>কচ্ছপ, পাখি এমনকি বুনো বানর দেখা
>ছোট একটি জাদুঘর ও লার্নিং সেন্টার, যেখানে পার্কের ইতিহাস জানা যায়

সিলভার স্প্রিংসে দৃষ্টিনন্দন ভ্রমণ- ছবি: লেখকের সৌজন্যে

সবচেয়ে উত্তেজনাকর হলো অ্যালিগেটর (গেটর) দেখা! ওরা কখনও নদীর ধারে রোদ পোহায়, আবার কখনও জলে ভেসে বেড়ায়। আমরা একটিকে নৌকা থেকে দেখতে পেয়েছিলাম—ধীরে ধীরে রোদে গা পুড়াচ্ছিল। ওরা দেখতে ভয়ানক হলেও দূরত্ব বজায় রাখলে কোনো সমস্যা হয় না। অনেক বাংলাদেশীর কাছে প্রথমবার গেটর দেখা এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা।

যাবেন কীভাবে?
সিলভার স্প্রিংস অবস্থিত ওকালায়, যা অরল্যান্ডো থেকে গাড়িতে প্রায় ১.৫ থেকে ২ ঘণ্টা দূরত্বে, আর গেইন্সভিল থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের পথ।

যাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া। যারা বাইরে থেকে ফ্লোরিডায় আসছেন, তাদের জন্য সবচেয়ে কাছের বড় এয়ারপোর্ট হলো অরল্যান্ডো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে সহজেই পৌঁছানো যায়।

সরাসরি কোনো বাস বা ট্রেন সার্ভিস নেই, তাই ব্যক্তিগত বা ভাড়াকৃত গাড়িই সবচেয়ে সুবিধাজনক।

খাবারের আয়োজন
অনেক বাংলাদেশি পরিবার আমাদের মতো নিজেরা খাবার নিয়ে যান। গাছের ছায়ায় বসে সবাই মিলে খাওয়া সত্যিই আনন্দের। তবে বাইরে খেতে চাইলে ওকালায় আছে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট:

১. দেশি খাবার: India Palace ও Amrit Palace—বিরিয়ানি, নান, কারি ইত্যাদি
২. হালাল খাবার: কিছু মধ্যপ্রাচ্যীয় রেস্টুরেন্টে কাবাব, গাইরো র‍্যাপ ও রাইস প্লেট পাওয়া যায়। চাইলে হালাল মাংস কিনে রান্নাও করা যায়।
৩. স্থানীয় আমেরিকান খাবার: সামুদ্রিক মাছ, বার্গার, শ্রিম্প—স্বাদে হালকা হলেও অনেকের কাছে ভালো লেগে যায়।

কিছু প্রয়োজনীয় টিপস
ভ্রমণের সেরা সময় হলো বসন্ত (Spring) ও শরৎ (Fall)। তখন আবহাওয়া মনোরম, আর ভিড়ও কম থাকে। গ্রীষ্মেও যাওয়া যায়, তবে গরমে পানির বোতল ও হালকা জামা-কাপড় নিয়ে যেতে হবে।

কিছু দরকারি পরামর্শ:
১. ছুটির দিনে গেলে বোট টিকিট আগে কেটে রাখুন
২. সানস্ক্রিন, ক্যাপ, সানগ্লাস, স্ন্যাকস নিয়ে যান
৩. ছবি তুলতে ভুলবেন না, বিশেষ করে বোট থেকে
৪. বন্য প্রাণীদের (বানর, গেটর) খাওয়ানো নিষেধ
৫. ফোন অফ করে প্রকৃতিকে উপভোগ করুন—এটাই সিলভার স্প্রিংসের আসল মজা

এসএএস/